dainik rswadesh
- ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ / ৪২ বার পঠিত

বিএনপিতেই গণতন্ত্র নেই, অথচ গণতন্ত্রের জন্য সারাদিন চিৎকার করে’ এমন মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারী) ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির একাংশের উদ্যোগে আয়োজিত নৌবিহারে গিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
নিজ দলের বিরুদ্ধে এমন স্ববিরোধী বক্তব্য সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিএনপির নানা সমালোচনা করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে বিএনপিতে গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকায় প্রকৃত নেতাদের কোনো মূল্যায়ন হচ্ছে না। কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় যিনি নেতা হচ্ছেন, তিনিই স্বৈরশাসক হয়ে যাচ্ছেন। দলের ভেতর গণতন্ত্র নাই আর দল সারাদিন চিৎকার করছে আমরা গণতন্ত্র চাই। এই চাওয়াটাও অন্যায়। যেখানে নিজের দলে গণতন্ত্র নাই সেখানে রাষ্ট্রের কাছে গণতন্ত্র চাই। যদি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দল চলতো, তাহলে কর্মীদের মধ্যে দুঃখ হতাশা থাকতো না।’
টাকা দিলেই নমিনেশন মেলে বলেও দলের প্রতি বিষোদাগার করেন বিএনপির এ নেতা।
দুঃখ প্রকাশ করে গিয়াসউদ্দিন আরও বলেন, ‘তৃণমূলের কর্মীরা এখন তাদের পছন্দের নেতা নির্বাচন করতে পারেন না। কাউন্সিলরদের ভোট ছাড়াই কেন্দ্র থেকে ‘অ্যাপয়েনটেড’ নেতা বানানো হয়। নির্লজ্জ বেহায়ার মতো অনেক সিনিয়র নেতা জুনিয়র নেতাদের তোষামোদি করতে হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদশ এভাবে চলতে পারে না।’
নেতা নির্বাচন প্রসঙ্গে গিয়াসউদ্দিন আরও বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্র তৈরি হয়েছে দল পরিচালনার জন্য। সেখানে স্পষ্ট লেখা আছে- সর্বস্তরের কমিটি নির্বাচিত হতে হবে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে। এই যে অধিকার আমাদের না দিয়ে অ্যাপয়েনটেড নেতা বানানো হয়, কেন্দ্র থেকে নিয়োগ দেয়া হয়। যেন দল নয়, আমরা চাকরি করি, গোলামি করি বা দাসত্ব করি। নিয়োগ দেয়া হলে ওই বাড়িতে ফুল দিয়ে ভরে যায়। কারণ যে অ্যাপয়েনটেড হয়েছে, তার বাড়িতে ফুল নিয়ে যাবে, সে যেন আবার কোনো একটা পদে অ্যাপয়েনটেড হতে পারে।’
নৌবিহারে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যে বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘আজকে আপনাদের সামনে আমি খোলাখুলি আলাপ করছি। এ জন্য আমি বহিষ্কার হতে পারি- ‘আই ডোন্ট কেয়ার’। আমি একজন মুক্তিযাদ্ধা। জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছি, এই রাজনীতিকে কারো কাছে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্য না, কারো কাছে মালিকানা স্বত্ব দেয়ার জন্য না। সৎ মানুষের নেতৃত্ব তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন ভোট দিয়ে কর্মীরা নেতা নির্বাচন করতে পারবে।’
দলের মনোনয়ন প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে জেলা বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মনোনয়ন নিয়ে কী হয়, আপনারা জানেন? মনোনয়ন বিক্রি হয়। কোটি কোটি টাকা মনোনয়ন বিক্রি হয়। এজন্য আমরা দেশ স্বাধীন করেছি? এজন্য আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করি? নিশ্চই না। ভালো মানুষের কোনো অভাব নেই বিএনপি বা অন্য দলে। তবে ভালো মানুষের টাকা না থাকলে সমস্যা। সে নমিনেশন পাবে না। কারণ টাকার গাট্টি নিয়ে দিতে হবে। বিক্রি হয় নমিনশন। এমন রাজনীতি যদি থাকে তাহলে বাংলাদশের আকাশে কখনো নতুন সূর্য উদয় হবে না।’
গিয়াসউদ্দিনের এমন বিতর্কিত বক্তব্যের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘তিনি (গিয়াসউদ্দিন) যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার ব্যক্তিগত এবং দলীয় গঠনতন্ত্র বিরোধী। সে দলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছে। দলীয় কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারকরা এরইমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে জেনেছেন। দলীয় শীর্ষ নীতি নির্ধারকরাই তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’